লিটন মাহমুদ
মুন্সীগঞ্জে অসহায় এবং গরীব রোগীদের আশা ভরসার স্থলে পরিনত হয়েছে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের গাইনী বিভাগ। একজন গরীব অসহায় রোগী প্রথম বেসরকারি ক্লিনিকে গিয়ে ৮০ হাজার টাকা খরচ করে জয়ারু টিউমারের অপারেশন করে স্বামীর আয়ের অর্থ ব্যয় করে ফেলেন রোগী মিসেস আয়েশা বেগম। পরবর্তীতে তার আবারও জয়ারুতে টিউমার হয়ে সেটি অনেক বড় হয়ে যায়। স্বামীর অভাব অনটনের সংসারে ঔষধ কিনে খাওয়ারও সামর্থ ছিলোনা মিসেস আয়েশা বেগমের।
বেসরকারি হাসপাতাল ক্লিনিকে গেলেই হাজার হাজার টাকার পরিক্ষা- নিরিক্ষা করতে হয়। পরে মিসেস আয়েশা বেগম স্বরনাপন্ন হন দৈনিক মুন্সীগঞ্জের খবরের চীফ রিপোর্টার ও মুন্সীগঞ্জ রিপোর্টার্স ইউনিটির সহ- সভাপতি সাংবাদিক এম এম রহমানের নিকট। সাংবাদিক রহমান আশা বেগমকে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে গাইনী ডাক্তার দেখানোর পরামর্শ প্রদান এবং হাসপাতালে বিনা খরচে অপারেশন বা টাকা লাগলে টাকা দিয়ে হলেও এই রোগীকে অপারেশন করে দিবে বলে রোগী এবং তার স্বজনদেরকে আশ্বাস প্রদান করেন।
অসহায় রোগী আশা বেগমের বিষয়টি তিনি তার সাংবাদিক সংগঠন মুন্সীগঞ্জ রিপোর্টার্স ইউনিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নাজমুল হাসান মিলন, সাধারণ সম্পাদক শাহনাজ বেগম হিরা এবং কার্যকরি সদস্য শামসুল হুদা হিটুকে অবহিত করেন। পরে তারা সকলে সিদ্ধান্ত নেন যদি হাসপাতালে টাকা ছাড়া করে দেয়া যায় তাহলে হাসপাতালে হবে। আর যদি বাহিরে হয় তাহলে মুন্সীগঞ্জ রিপোর্টার্স ইউনিটির সাংবাদিক এবং উপদ্রেষ্টাদের কাছ থেকে অর্থ নিয়ে রোগীর চিকিৎসা এবং অপারেশন করা হবে। পরে রোগীর বিষয়টি মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা: আবু হেনা মোহাম্মদ জামালকে জানালে তিনি ওই রোগীকে বিনা খরচে অপারেশন, ঔষধ যা লাগে সব দিয়ে অপারেশন করে দিবেন বলে ঘোষণা দেন। ওই দিনই অর্থাৎ ১৮ এপ্রিল তিনি রোগীকে রক্ত পরিক্ষা, ইসিসি, এক্সরে, আল্টাসহ অপারেশন সংক্রান্ত সকল পরিক্ষা- নিরিক্ষা ফ্রি করে দেন। রোগী আশা হাসপাতালেই সকল পরিক্ষা- নিরিক্ষা বিনামূলে করেন। পরে রিপোর্টগুলো গাইনী ডাক্তারদের দেখান। এরপর মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা: আবু হেনা মোহাম্মদ জামাল উনি নিজে রুগিকে গাইনী ডিপার্টমেন্ট এ কর্মরত ডাক্তাদের সাথে কথা বলে সঠিক চিকিৎসার জন্য পাঠান। মিসেস আয়েশা দীর্ঘদিন যাবৎ “এন্ড্রোমেট্রিয়াল পলিপ” রুগে ভুগতেছিলেন। এর সঠিক চিকিৎসা হলো আপারেশন। প্রাইভেটে অপারেশনের খরচ লাগতো ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকা। গতকাল মঙ্গলবার সকালে রোগী আয়েশা বেগমের অপারেশন সম্পন্ন করেন হাসপাতালের গাইনী বিভাগের চিকিৎসকরা। রোগীর অপারেশনে প্রয়োজনীয় ঔষধ হাসপাতালের সমাজসেবা অফিসের রোগী কল্যাণ তহবিল থেকে দেয়া হয়। এই অপারেশনে সময় হাসপাতালের সমাজসেবা অফিসার রিয়া খান এবং অফিস সহায়ত মো. তাজুল ইসলাম প্রয়োজনীয় ঔষধ সরবরাহ করেন।
ডা. মো: জোবায়ের ইসলাম এ্যানেসথেসিয়া কনসালটেন্ট তিনি জানান, মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলা নয়াগাঁও এলাকার বাসিন্দা আয়েশা বেগম গত ১৮ এপ্রিল হাসপাতালে ভর্তি হন। ঐ সময় অত্র হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আবু হেনা মোহাম্মদ জামাল সাহেবের সাথে যোগাগোগ করলে উনি উক্ত রুগির সব রকম দায়িত্ব নিয়ে নেন। কিন্তুুু রুগি অত্যন্ত গরীব বিধায় তার এই খরচ বহন করা সম্ভব না। অতপর জেনারেল হাসপাতালে রুগির অপারেশনের জন্য সব টেস্ট ফ্রী তে করে আপারেশনের জন্য ফীট করে ২৩.০৪.২৪ ইং তারিখে ডেট দেওয়া হয়। উক্ত দিন গাইনী ও এ্যানেসথেসিয়া বিভাগ সমন্বয় করে মিসেস আয়েশার সফল আপারেশন সম্পন্ন করেন। তিনি আরোও জানান, গত ১০ মার্চ মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে অপারেশন থিয়েটারে এক বিশাল জরায়ূ টিউমর অপারেশন করা হয়। উল্লেখ যে মিসেস নাজমা বেগম, স্বামী: মো বাচ্চু, ঠিকানা: মুক্তারপুর। গত ২৮.০২.২৪ ইং তারিখে অত্র হাসপাতালে গাইনী বিভাগে ভর্তি হন। তারপর তার সকল পরিক্ষা নিরীক্ষা করে, ২/৩ ব্যাগ রক্ত সঞ্চালন করে, জরায়ু সহ টিউমর অপারেশনের জন্য প্রস্তুুত করেন গাইনী ডক্টররা। প্রাইভেটে এই আপারেশনের খরচ লক্ষ টাকা ছাড়িয়ে যেতো। এখানে সব বিনা মূল্যে করা হয়।গত ১০.০৩.২৪ তারিখ সকাল ১১ টায় অপারেশন শুরু করেন। দীর্ঘ ৩ ঘন্টার অপারেশনের পর গাইনী ডাক্তার টিম প্রায় ৪ কেজি ওজনের এক টিউমর অপারেশন করতে সক্ষম হন। টিউমরটির সাইজ ছিল দৈঘ্য ২২০ মিলি মিটার এবং প্রস্থ্য ২১০ মিলি মিটার। অপারেশন সময় দুই ব্যাগ ব্লাড এর প্রয়োজন হয়।
অপারেশনের পরবর্তিতে রুগি ভাল আছেন এবং তার টিউমরটি পরিক্ষা করার জন্য ল্যাবে পাঠানো হয়। অপারেশন চলাকালিন সময় প্রথমে স্পাইনাল এ্যানেসথেসিয়া প্রদান করা হয়। পরবর্তিতে অপারেশস ৩ ঘন্টা দীর্ঘ হলে জেনারেল এ্যানেথসেসিয়ায় কনভার্ট করা হয়।
এদিকে গতকাল আয়েশা বেগমের অপারেশনে রক্ত প্রদানের জন্য একজন লোক খুঁজে বের করে তাকে নিয়ে প্রায় ৩ ঘন্টা মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে অবস্থান করেন মুন্সীগঞ্জ রিপোর্টার্স ইউনিটির সাংবাদিকবৃন্দরা। রোগীকে অপারেশনের পর বেডে নেয়া হলে রোগীকে দেখতে ছুটে যান মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা: আবু হেনা মোহাম্মদ জামাল। এসময় তিনি রোগীর স্বজনদের সাথে কথা বলেন । পাশাপাশি অসহায় রোগীর বিষয়টি তাকে অবহিত করে রোগীর পাশে থেকে সার্বিক সহযোগিতা করার জন্য তিনি সেখানে উপস্থিত রিপোর্টার্স ইউনিটির সাংবাদিকদের আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানান।
পত্রিকার লিংক পেতে ক্লিক করুন:
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস